বর্তমান দিনে ভারতের জন্ম সার্টিফিকেট (Birth Certificate) শুধুমাত্র একটি জন্মের প্রমাণপত্র বা শুধু একটি কাগজ নয় এটি হলো ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। বর্তমান ভারতের সমস্ত জায়গায় এমনকি সমস্ত সরকারি কাজকর্মে বিশেষ করে স্কুল-কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, আধার, ভোটার কার্ড, এমনকি চাকরির ক্ষেত্রেও জন্ম সনদ অপরিহার্য। যাদের কাছে জন্ম সার্টিফিকেট নেই এবং এখনো বানাননি তাদের জন্য সরকার নতুন করে জন্ম সার্টিফিকেট বানানোর সুযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে অনেকের পরিবার অশিক্ষিত হওয়ার জন্য বা বেশ কিছু ঝামেলার জন্য আর জন্ম সনদ তৈরি করেনি। এর ফলে দেখা গিয়েছে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তবে সুখবর হলো— পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখন বয়স পার হলেও দেরিতে জন্ম সনদ (Delayed Birth Certificate) করার সুযোগ দিচ্ছে। যাদের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে জন্ম সার্টিফিকেট বানাইনি তাদের জন্য এবার দেরিতে হলেও জন্ম সার্টিফিকেট বানানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাই আপনার বা আপনার পরিবারের যদি কারো এখনো জন্ম সার্টিফিকেট না থেকে থাকে তাহলে এটি খুব শীঘ্রই বানিয়ে নিতে পারেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই সনদের জন্য আর সরকারি অফিসে ঘুরতে হবে না; অনলাইনে বসেই আবেদন করা যাবে। আপনি চাইলে ঘরে বসে নিজে নিজেও এর জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
জন্ম সনদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমান দিনে জন্ম সনদ অন্যান্য প্রমাণপত্রের তুলনায় সর্বপ্রেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমস্ত সরকারি কাজকর্মে বর্তমান জন্ম সার্টিফিকেট লাগে এছাড়াও নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে গেলে জন্ম সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি নেওয়া হয় না। তাই যে সমস্ত ক্ষেত্রে জন্ম সার্টিফিকেট অপরিহার্য-
- স্কুল-কলেজ ভর্তি বা পরীক্ষার ফর্মে আবশ্যিক
- পাসপোর্ট, আধার, ভোটার কার্ড তৈরিতে বর্তমান জন্ম সার্টিফিকেট লাগবে
- বিবাহের সময় আইনি প্রমাণ হিসেবে জন্ম সার্টিফিকেট লাগবে
- যেকোনো জায়গায় বয়সের প্রমাণ দেখাতে গেলে বর্তমান জন্ম সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে
- সমস্ত ধরনের সরকারি কাজকর্ম করতে গেলে জন্ম সার্টিফিকেট প্রয়োজন
তাই জন্ম সনদ না থাকলে ভবিষ্যতে প্রায় সব জায়গাতেই সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তাই আপনার যদি এখনো জন্ম সার্টিফিকেট না থেকে থাকে তাহলে আপনি পরবর্তীকালে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন তাই এখনো সময় রয়েছে আপনি এই সার্টিফিকেট বানিয়ে নিতে পারেন।
আগে যে সমস্যাগুলি হতো
অনেক বছর ধরে জন্ম সনদ তৈরি করতে দেরি হয়ে গেলে আগে নাগরিকদের জেলা বা পৌরসভা অফিসে বারবার যাতায়াত করতে হতো। এর ফলে বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হতো এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রচুর সময় নষ্ট হয় বা দালালের চক্রে পড়ার ভয় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে পুরনো বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করলে আবেদন পত্র খারিজ করে দেওয়া হত। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেই জটিলতা অনেকটাই কমে গেছে। এখন কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজেই ঘরে বসে আপনি বানিয়ে নিতে পারবেন এই সার্টিফিকেট।
দেরিতে জন্ম সনদ করার নিয়ম
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস (Office of the Registrar General) স্পষ্ট নিয়ম করেছে—
জন্মের পর সময়সীমা | করণীয় | প্রয়োজনীয় কাগজপত্র |
---|---|---|
০ – ২১ দিন | সাধারণ Birth Certificate আবেদন | হাসপাতাল/নার্সিংহোমের রিপোর্ট |
২১ দিন – ১ বছর | বিলম্বিত আবেদন, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনুমোদন | বাবা-মা বা অভিভাবকের অ্যাফিডেভিট |
১ বছরের বেশি | আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অনুমোদন সহ আবেদন | স্কুল সনদ, ভোটার কার্ড, আধার, বাস্তুসংস্থান প্রমাণ |
কারা আবেদন করতে পারবেন?
সমস্ত ভারতীয় নাগরিক বিশেষ করে যাদের জন্ম ভারতে হয়েছে তারা সকলেই জন্ম সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যারা যারা আবেদনের সুযোগ পাবেন তারা হলেন-
- যাদের জন্ম পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে কিন্তু জন্ম সনদ নেই তারা সকলেই এবার এই জন্ম সনদ বানাতে পারবেন
- বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হলেও জন্ম সনদ বানানো যাবে
- যাদের স্কুল সার্টিফিকেট / ভোটার কার্ড / আধার রয়েছে তারা সকলেই জন্ম সনদ বানাতে পারবেন
- যারা আগে কখনো জন্ম নিবন্ধন করেননি তারা সকলেই জন্ম সনদ বানাতে পারবেন
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া (Step by Step Guide)
রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই অনলাইনে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে খুব সহজেই আপনি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানিয়ে জন্ম সনদ বানিয়ে ফেলতে পারবেন। এখনো যদি আপনি জন্ম সনদ না বানিয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে বানাতে হয় সে ব্যাপারে জেনে নিন-
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
👉 wbhealth.gov.in বা রাজ্যের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন পোর্টালে প্রবেশ করুন। বিশেষভাবে মনে রাখবেন এটি অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হতে হবে।
ধাপ ২: “Birth Certificate” অপশন বেছে নিন
হোমপেজে Birth & Death Registration সেকশন থেকে “Apply for Delayed Birth Certificate” ক্লিক করুন। এখানেই আপনি আপনার জন্ম সনদের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে এবং আধার কার্ড থাকতে হবে।
ধাপ ৩: ফর্ম পূরণ করুন
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে আপনার আবেদনের ফরমটি পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার নাম, জন্মতরিখ, জন্মস্থান, বাবা মায়ের নাম, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি সঠিক স্থানের সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৪: নথি আপলোড করুন
এখানে আবেদন জানানোর সময় আপনার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট/আধার কার্ড/ভোটার কার্ড থাকতে হবে। আপনি যে দেরি করে জন্ম সার্টিফিকেট তৈরি করছেন এজন্য আপনাকে অবশ্যই অভিভাবকের হলফনামা (Affidavit) জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনাকে অবশ্যই ঠিকানা প্রমাণ দিতে হবে।
ধাপ ৫: ফি জমা দিন
অনলাইনে Net Banking / UPI / Debit Card এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে।
ধাপ ৬: রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করুন
আবেদন শেষে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন। এর মাধ্যমে আবেদন ট্র্যাক করা যাবে। পরবর্তীকালে আপনি আপনার জন্ম সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড করতে গেলেও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রয়োজন হবে।
কত টাকা ফি লাগবে?
দেরিতে জন্ম সনদ করতে ফি নির্ভর করছে জন্মের সময়সীমার ওপর।
আবেদন সময়সীমা | সরকারি ফি (আনুমানিক) |
---|---|
০ – ২১ দিন | ফ্রি |
২১ দিন – ১ বছর | ₹ ১০ – ₹ ৫০ |
১ বছরের বেশি | ₹ ২০০ – ₹ ৫০০ (ম্যাজিস্ট্রেট অনুমোদনসহ) |
অর্থাৎ এখানে আবেদন জানানোর জন্য আপনার তেমন বড় কোন ফি প্রয়োজন হবে না। খুব অল্প খরচেই আপনি আপনার জন্ম সনদ বানিয়ে নিতে পারবেন।
আবেদন করতে যে নথি লাগবে
এখানে আবেদন জানাতে হলে আপনার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকতে হবে। যে সমস্ত ডকুমেন্টস আপনার প্রয়োজন এবং আপনার অবশ্যই থাকতে হবে সেগুলি হল-
- আবেদনকারীর নিজস্ব আধার কার্ড
- আবেদনকারীর ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড
- স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট বা স্কুল যেকোনো সার্টিফিকেট বা মার্কসিট
- হাসপাতালের সনদ (যদি থাকে)
- অ্যাফিডেভিট (Notary দ্বারা স্বাক্ষরিত)
- অভিভাবকের পরিচয়পত্র ও ডকুমেন্টস
কবে হাতে পাবেন সনদ?
বর্তমান সমস্ত কিছু ডিজিটালাইজ ভাবে হচ্ছে এবং খুব সহজেই অনলাইন এর মাধ্যমে করা যাচ্ছে তাই আবেদন করার পর সাধারণত ১৫ – ৩০ দিনের মধ্যে জন্ম সনদ ডাউনলোড করা যায়। তবে এক বছরের বেশি বিলম্বের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন লাগায় সময় বেশি লাগতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদন জানানোর আগে যদি আপনি সমস্ত ডকুমেন্টস রেডি রাখতে পারেন তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার জন্ম সনদ হাতে পেয়ে যাবেন।
যাদের জন্ম সনদ এখনো তৈরি হয়নি, তাদের জন্য এটি এক অনন্য সুযোগ। অনেকেই বিভিন্ন কারণ এর জন্য জন্ম সনদ বানাতে পারেন নি তবে এখন সকলেরই জন্ম সনদ থাকতে হবে তাই সরকার নতুন করে জন্ম সনদ বাড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে। বয়স পেরিয়ে গেলেও এখন অনলাইনে বসেই সহজে জন্ম সনদ করা সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই পরিষেবা শুরু করায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং ভবিষ্যতে নাগরিক পরিচয় সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো যাবে। তাই এখনো আপনি জন্ম সনদ না বানিয়ে থাকলে আর দেরি করবেন না তাড়াতাড়ি অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। তাই দেরি না করে আজই অনলাইনে WB Delay Birth Certificate-এর জন্য আবেদন করুন।

Our team has been engaged in professional content writing for the past 5 years. With extensive experience in creating high-quality, SEO-friendly, and reader-focused articles, we specialize in delivering accurate information on government schemes, education, jobs, technology, and news updates. Our goal is to provide clear, reliable, and engaging content that adds real value to readers while maintaining the highest editorial standards.