পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের জীবনে রেশন কার্ড কেবলমাত্র একটি কাগজ নয়, বরং এটি হলো প্রতিদিনের খাদ্য নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের জন্য রেশন একটি স্বল্পমূল্যে খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার একমাত্র পথ। এর মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে বা একেবারে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে চাল, গম, আটা, কেরোসিন কিংবা অন্যান্য খাদ্যশস্য। শুধু খাদ্যের জন্য নয়, আজকাল বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে রেশন কার্ড পরিচয়পত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। রেশন কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে মানুষের দরকার হয়। ফলে এটি হারানো মানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়া। কিন্তু কেন্দ্র সরকার নতুন নিয়ম জারি করেছে এই নিয়মে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যেতে পারে। আপনার রেশন কার্ড সুরক্ষিত রাখতে হলে কি করবেন বিস্তারিত জেনে নিন।
সম্প্রতি রাজ্য খাদ্য দপ্তর একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে, যা মেনে না চললে লাখ লাখ মানুষের রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যেতে পারে। নতুন করে কঠোর নিয়ম জারি করা হয়েছে এবং এই নতুন নিয়মে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত রেশন না তুললে আপনার কার্ড প্রথমে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং পরে তা স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার রেশন কার্ডটি বাতিল করতে না চান এবং সচল রাখতে চান তাহলে আপনাকে বা প্রতিটি পরিবারকে এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে, নইলে হঠাৎই একদিন দেখা যেতে পারে যে বহু বছরের পরিচিত কার্ডটির আর কোনও মূল্য নেই বাতিল হয়ে গিয়েছে রেশন কার্ড।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ রেশন কার্ড?
ভারতের মতো দেশে যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও সরকারি খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল, সেখানে রেশন কার্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। রেশন কার্ডের উপর নির্ভর করে প্রচুর গ্রামীণ এলাকায় মানুষজন স্বল্পমূল্যে খাদ্যদ্রব্যের জন্য নির্ভরশীল হয়ে থাকে। গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্র মানুষ এই কার্ড ব্যবহার করে কম দামে বা বিনামূল্যে খাদ্য পেয়ে থাকেন। করোনা মহামারের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বিনামূল্যের রেশন দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রেশন কার্ড এখন অনেক ক্ষেত্রে পরিচয় প্রমাণ হিসেবেও গ্রহণযোগ্য। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড যেমন পরিচয়পত্র ঠিক তেমনি আপনি রেশন কার্ড কেউ পরিচয় পত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এবং এর গুরুত্ব আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। বর্তমান বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য রেশন কার্ডের প্রয়োজন হয়।
তাই কারও যদি রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যায়, তবে তিনি শুধু খাদ্যের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না, বরং বিভিন্ন সরকারি সুবিধাও হাতছাড়া করবেন। বেশকিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার রেশন কার্ড কোনদিনও বন্ধ হবে না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার মানুষ, যাঁরা প্রতিদিনের খাদ্যের জন্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে রেশনের উপর নির্ভর করেন, তাঁদের জীবনে এটি মারাত্মক সমস্যা তৈরি করবে যদি রেশন কার্ড বাতিল হয়। তাই আপনার রেশন কার্ডে বাতিল হওয়ার আগে সুরক্ষিত রাখুন।
নতুন নিয়মে কী পরিবর্তন আসছে?
আগে নিয়ম ছিল, টানা দুই মাস রেশন না তুললে কার্ড সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। তবে এই নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের পুরনো নিয়মে বহু মানুষ সমস্যায় পড়তেন, কারণ কর্মসূত্রে বা অন্য কোনও কারণে কেউ যদি কয়েক মাস নিজের গ্রামে না থাকেন, তবে তাঁর কার্ড বন্ধ হয়ে যেত। এ রেশন কার্ড বাতিল না হওয়ার জন্য নিয়মিত রেশন তুলতে হতো পরিবারের কোন সদস্যকে, না হলে পুরোপুরি রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যেত।
তবে সব থেকে বড় খুশির খবর হলো এই নিয়মের বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবার টানা ৬ মাস যদি কেউ রেশন না তোলে তাহলে সাময়িকভাবে তার কার্ডটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তবে এই কার্ডটি সক্রিয় করার জন্য আরও তিন মাস সময় দেওয়া হবে এবং এই তিন মাসেও যদি কেউ এই কার্ডের গুরুত্ব না দেয় তাহলে পুরোপুরি ভাবে রেশন কার্ডটি বাতিল হয়ে যাবে।
অর্থাৎ, মোট নয় মাসের মধ্যে যদি কার্ডধারী রেশন না তোলেন বা কেওয়াইসি প্রক্রিয়া না করেন, তবে তাঁকে স্থায়ীভাবে রেশন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
কেন এই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার?
রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্র সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টন খাদ্যশস্য সাধারণ মানুষদের জন্য বরাদ্দ করেন এবং রেশন দোকানে দোকানে পাঠিয়ে দেন। এর ফলে দেখা যায় অনেক সময় রেশন কার্ড থাকা সত্বেও অনেক গ্রাহক রেশন তুলে না এর ফলে রাজ্য সরকারের বা কেন্দ্র সরকারের রেশন অপচয় হয়। এর ফলের দেখা যায় ডিলারেরা এই রেশন দ্রব্য কালাবাজারে প্রচুর টাকায় বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে এর ফলে যারা রেশন এর উপর নির্ভর করে জীবন-নির বাহ করে সেই সমস্ত দরিদ্র পরিবারগুলো এর থেকে বঞ্চিত হয়।
এই দুর্নীতি এবং অপচয় রোধ করতেই সরকার নতুন নিয়মে কঠোরতা আনছে। তাই এই নিয়ম সকলেরই পালন করতে হবে। এর ফলে যারা সত্যিই প্রয়োজনীয়, তাঁদের কাছে খাদ্য পৌঁছে যাবে, আর যারা কার্ড ব্যবহার করেন না তাদের অযথা তালিকায় রাখা হবে না।
নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া কার্ড কীভাবে চালু করবেন?
যদি কেন্দ্র সরকারের এই নিয়মে কারো কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী 3 মাস সময় দেওয়া হবে এবং এই সময়ে আবার এই কার্ড সক্রিয় করা যাবে। এক্ষেত্রে নিকটবর্তী রেশন দোকানে গিয়ে বা যেখানে রেশন কার্ড ঠিক করা হয় সেখানে গিয়ে কেওয়াইসি করে নিতে হবে। আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ড লিংক করে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করলে এই কার্ডটি পুনরায় সচল হয়ে যাবে।
তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে এই তিন মাসের মধ্যেও যদি কেউ কোন গুরুত্ব না দেন তাহলে সেই কাজটি পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং সেটি আর চালু করা যাবে না।
এরফলে যাদের কার্ড একবার বাতিল হয়ে যাবে তারা আর রেশন তুলতে পারবে না। এর ফলে দেখা যাবে অনেক সরকারি প্রকল্প থেকে তারা বঞ্চিত থাকবে এবং গ্রামীন এলাকায় যারা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন তাদের জন্য ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হবে।
তাই আপনার রেশন কার্ডটি বাতিল হওয়ার আগেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। এজন্য আপনাকে বা আপনার পরিবারকে আপনার কার্ড দিয়ে নিয়মিত রেশন তুলতে থাকতে হবে। নিয়মিত রেশন তোলা হলে সরকারের কাছে সেই কার্ডটির হিসেব থাকে এবং সেই কার্ডটি সর্বদা সচল থাকে।
রেশন কার্ড কেবলমাত্র একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং এটি কোটি কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা-কবচ। অনেকে এই রেশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন নির্বাহ করে। সরকারের নতুন নিয়ম হয়তো অনেকের কাছে কঠোর মনে হবে, কিন্তু বাস্তবে এটি খাদ্যশস্যের অপচয় রোধ এবং দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই যাদের রেশনের প্রয়োজন নেই তারা নিয়মিত রেশন না তুললে তাদের কার্ড সরকারের তরফ থেকে অটোমেটিক নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। এখন প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব হলো নিয়ম মেনে চলা এবং নিয়মিত রেশন তোলা।
যদি কারও বাড়িতে রেশন কার্ড থাকে, তবে মাসে অন্তত একবার রেশন তোলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যদি আপনি দীর্ঘদিন রেশন না তোলেন তাহলে আপনার কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার কার্ডটি সর্বদা সচল রাখতে সময়মতো কেওয়াইসি করুন, আধার আপডেট রাখুন। না হলে হঠাৎই একদিন দেখা যাবে কার্ড স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে গেছে, আর নতুন করে কার্ড করতে গিয়ে পড়তে হবে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে।
অতএব, এখন থেকেই সতর্ক থাকুন এবং আপনার পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কারণ রেশন কার্ড হারালে শুধু খাদ্য নয়, হারাবেন বহু সরকারি সুবিধাও।

Our team has been engaged in professional content writing for the past 5 years. With extensive experience in creating high-quality, SEO-friendly, and reader-focused articles, we specialize in delivering accurate information on government schemes, education, jobs, technology, and news updates. Our goal is to provide clear, reliable, and engaging content that adds real value to readers while maintaining the highest editorial standards.