পূজার মরসুমে ভারত সরকার আবারও বিরাট বড় উদ্যোগ নিল সাধারণ মানুষদের জন্য। ভারতের কোটি কোটি পরিবারের রান্নাঘরে আজও কাঠ, কয়লা বা কেরোসিনের ভরসায় রান্না হয় এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। ধোঁয়ার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন দেখা দেয়, তেমনি বাড়ে পরিবেশ দূষণও। ইতিমধ্যেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণের উদ্যোগ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার প্রত্যেক পরিবারকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্যাস কানেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সমস্যার সমাধান আনতেই কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক বছর আগে চালু করেছিল প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (Pradhan Mantri Ujjwala Yojana)। এবার উৎসবের মরশুমে আবারও বড় ঘোষণা করল সরকার। নতুন অর্থবর্ষে আবারো নতুন করে গ্যাস কানেকশন দেওয়া হবে।

পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) আরও ২৫ লক্ষ নতুন LPG সংযোগ দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এর ফলে দেশের প্রায় কোটি পরিবারের জীবনে নতুন আলো ফুটবে। ইতিমধ্যেই আগে যারা এই কানেকশন নিতে পারেননি তারা এবার নতুন করে এই কানেকশন নিতে পারবেন।

 নতুন ঘোষণায় কতজন উপকৃত হবেন?

এই নতুন পদক্ষেপের ফলে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মোট গ্রাহক সংখ্যা পৌঁছে যাবে ১০.৫৮ কোটিতে। ইতিমধ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর পরিবার রয়েছে যারা এখনো পর্যন্ত গ্যাস কানেকশন নেননি এর ফলে যারা এখনো এই সুবিধা পাননি তারা এবার নতুন করে আবার এই সুবিধা পেতে চলেছেন। অর্থাৎ প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোটি কোটি মহিলা রান্নাঘরে আধুনিক জ্বালানির সুবিধা পাচ্ছেন।

এবার যুক্ত হওয়া ২৫ লক্ষ সংযোগের জন্য সরকারের খরচ হবে প্রায় ₹৬৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে—

  • ₹৫১২.৫ কোটি টাকা যাবে সম্পূর্ণ ডিপোজিট ফ্রি সংযোগের জন্য
  • ₹১৬০ কোটি টাকা খরচ হবে সাবসিডি ভাতা প্রদানের জন্য

প্রতিটি নতুন সংযোগে গড়ে সরকারের খরচ হবে প্রায় ₹২০৫০ টাকা

তবে সরকারের যতই খরচ হোক সরকার চাইছে ভারতবর্ষকে কারবন মুক্ত দেশ তৈরি করতে এবং কার্বনের পরিমাণ অনেকটা কমাতে এজন্য ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য রান্নার গ্যাস কানেকশন দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছেন এর ফলে কাঠ কয়লা পুড়িয়ে রান্না করতে হবে না এবং পরিবেশ দূষণ অনেকটাই কমবে।

 উজ্জ্বলা যোজনায় কী কী ফ্রি মিলবে?

এই প্রকল্পে নতুন সংযোগ পাওয়া মহিলাদের একটিও টাকা দিতে হবে না। সরকার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে।

ফ্রি হিসেবে পাওয়া যাবে—

  • এলপিজি সিলিন্ডার কানেকশন
  • প্রেসার রেগুলেটর
  • সেফটি হোস
  • ডোমেস্টিক গ্যাস কনজিউমার কার্ড বুকলেট
  • প্রথম সিলিন্ডার
  • চুলা (স্টোভ)

অর্থাৎ একটি পূর্ণাঙ্গ রান্নার সেটআপ একেবারে বিনা খরচায় পাওয়া যাবে।

গ্রাহকরা কোন ধরনের সংযোগ বেছে নিতে পারবেন?

নতুন সুবিধার অধীনে আবেদনকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিলিন্ডার বেছে নিতে পারবেন। যদি বড় পরিবার থাকে তাহলে বড় গ্যাস সিলিন্ডার এবং যদি ছোট পরিবার থাকে তাহলে ছোট গ্যাস সিলিন্ডারের কানেকশন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে—

  • ১৪.২ কেজির সিঙ্গল কানেকশন
  • ৫ কেজির সিঙ্গল কানেকশন
  • ৫ কেজির ডাবল কানেকশন

বছরে সর্বোচ্চ ৯টি রিফিল সিলিন্ডার পাওয়া যাবে।

এছাড়া ১৪.২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সরকার দেবে ₹৩০০ ভর্তুকি। তাই বড় গ্যাস সিলিন্ডার কানেকশন নেওয়াটাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 কেন এই প্রকল্প এত গুরুত্বপূর্ণ?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৬ সালের ১ মে উত্তর প্রদেশের বালিয়া থেকে উজ্জ্বলা যোজনার সূচনা করেছিলেন। প্রথম ধাপে দেওয়া হয়েছিল ৫ কোটি সংযোগ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ দূষণ রোধ করা কারণ রান্নার সময় প্রচুর পরিমাণে ধোয়া পরিবেশে মিশ্রিত হয় এর ফলে পরিবেশ প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণার পর থেকে আজ তা বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ছাড়িয়ে। এটি প্রমাণ করে—

  • মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রকল্পটি সফল
  • গ্রামীণ পরিবারের জীবনে এসেছে বড় পরিবর্তন
  • পরিবেশ দূষণ কমছে
  • আধুনিক রান্নাঘরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠ ও কয়লার ধোঁয়া থেকে যে ফুসফুস ও চোখের সমস্যা হতো, তা এখন অনেকাংশে কমেছে। একইসঙ্গে, রান্নার সময় বাঁচছে এবং জীবনের মান উন্নত হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ যেরকম কমবে ঠিক তেমনি মানুষের জীবনের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।

 ফ্রি কানেকশন পেতে কোন কোন ডকুমেন্ট লাগবে?

আবেদন করতে মহিলাদের কিছু পরিচয়পত্র ও নথি জমা দিতে হবে। এখানে যে সমস্ত ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে সেগুলি হল —

  • আধার কার্ড (আবেদনকারী মহিলার নামে)
  • ভোটার আইডি / প্যান কার্ড
  • রেশন কার্ড (BPL বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর)
  • আবাসিক প্রমাণপত্র বা বিদ্যুৎ/জল/গ্যাস বিল
  • ব্যাঙ্ক পাসবুক ও IFSC কোড সহ অ্যাকাউন্ট নম্বর
  • সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রদত্ত শংসাপত্র (BPL/অন্ত্যোদয়/SC-ST ইত্যাদি)
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • জন্ম সনদ/বয়স প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • আগে থেকে LPG সংযোগ নেই—এই বিষয়ে স্ব-ঘোষণাপত্র

 আবেদন করার প্রক্রিয়া

১. প্রথমে নিকটবর্তী গ্যাস এজেন্সি বা বিতরণকারী সংস্থায় যোগাযোগ করতে হবে।
২. নির্ধারিত ফর্ম ফিলআপ করতে হবে।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
৪. ভেরিফিকেশন শেষে অনুমোদন মিললেই সংযোগ পাওয়া যাবে।

তবে এখানে আবেদন করার সময় অবশ্যই আধার কার্ড এবং ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক থাকতে হবে ও ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ডের লিংক থাকতে হবে।

এই প্রকল্প মূলত মহিলাদের নামেই চালু হয়েছে। কারণ রান্নার ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেন গৃহিণীরা। তাই সরাসরি মহিলাদের নামে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তাই এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে গেলে মহিলাদের নামে নিতে হবে।

সরকার মনে করছে, এটি শুধুমাত্র রান্নার সুবিধা নয়, বরং নারী ক্ষমতায়নের এক বড় পদক্ষেপ। কারণ গ্যাস সংযোগের মালিকানা থাকায় মহিলাদের সামাজিক অবস্থানও শক্তিশালী হচ্ছে। এর ফলে মহিলাদের স্বাস্থ্যের অনেকাংশে উন্নতি ঘটবে এবং রান্নায় অনেকটা সময় সাশ্রয় হবে।

উৎসবের মরশুমে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার এই নতুন ঘোষণা নিঃসন্দেহে কোটি কোটি পরিবারকে আনন্দ দেবে। দেশের মা-বোনেদের জন্য এটি এক বড় উপহার। ইতিমধ্যেই কোটি কোটি পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে তবে এখনো অনেক পরিবার রয়েছে যরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন এবার তারাও নতুন করে এই সুবিধা পাবেন।

একদিকে যেমন এটি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারের আর্থিক বোঝা কমাবে, অন্যদিকে আধুনিক রান্নার সুবিধা এনে দেবে প্রতিটি ঘরে।

এই প্রকল্প কেবল রান্নাঘরের পরিবর্তন নয়, বরং স্বাস্থ্য, সমাজ ও পরিবেশের উন্নয়নের এক বড় পদক্ষেপ