পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নতুন ও জনপ্রিয় প্রকল্প ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan) নিয়ে এলো বড় আপডেট। অর্থ দপ্তরের অডিট শাখা থেকে নতুন করে নতুন এক নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা স্থানীয় স্তরে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নতুন দিশা দেখাবে। ইতিমধ্যেই এটি দারুন সফলতা অর্জন করেছে কিছুদিনের মধ্যে। নতুন এই পরিবর্তন আরো স্বচ্ছতা এবং দ্রুততা নিয়ে আসবে।

Amader Para Amader Samadhan 2025
Amader Para Amader Samadhan 2025

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত অর্থ দপ্তরের মেমো নম্বর 3368-F(Y) অনুযায়ী এই নির্দেশিকা কার্যকরও করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গতি—এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।

 ’আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য

আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ। সাধারণ মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য পাড়ায় পাড়ায় এই কর্মসূচি বসানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তাঁদের এলাকার ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো—

  • এই কর্মক্ষেত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো পাড়ার উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং কারো কোন সমস্যা থাকলে তার দ্রুত সমাধান।
  • ছোট বাজেটের হলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলে এমন কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া। মানুষের সমস্ত সমস্যারএখানে সমাধান করার কথা বলা হয়েছে।

কোন ধরনের কাজ এই প্রকল্পের আওতায়?

আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচির মাধ্যমে যে সমস্ত কাজকর্ম দ্রুততার তার সঙ্গে করা হয় সেগুলি হল-

  • এর মাধ্যমে পাস করানো হয় রাস্তা মেরামত বা নতুন রাস্তা নির্মাণ
  • নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়ন করার ব্যবস্থা করা হয়
  • পানীয় জলের পাইপলাইন ঠিক করা
  • পাড়ার আলো (স্ট্রিট লাইট) বসানো বা মেরামত
  • কমিউনিটি হল বা মাঠ সংস্কার
  • পাড়ার ছোট সেতু মেরামত

এছাড়াও আরো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এখানে করার কথা বলা হয়েছে। সরকার মনে করছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারবেন, দীর্ঘ প্রশাসনিক জটিলতা ছাড়াই।

 নতুন নির্দেশিকার প্রধান দিকগুলো

এতদিন পর্যন্ত এই প্রকল্প তথ্যভাবে চলছিল এবং এখানে আরো বেশ কিছু নতুন নির্দেশিকা যুক্ত করা হয়েছে। অর্থ দপ্তরের সর্বশেষ স্মারকলিপি (Memo No: 3368-F(Y), Date: 12.09.2025) অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম সংযোজন করা হয়েছে।

বিষয় নতুন নিয়মে কী বলা হয়েছে
কাজের অনুমোদন স্থানীয় স্তর থেকে প্রস্তাবিত প্রতিটি কাজ পূর্ত কার্যনির্বাহী বিভাগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা (vet) করতে হবে। এর ফলে যে কোন কাজের অনুমোদন খুব দ্রুত হবে।
পূর্ববর্তী নির্দেশিকা সংযোজন ২২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত মেমো নম্বর 3133-F(Y)-এর বিস্তারিত নির্দেশিকার একটি অতিরিক্ত ধাপ হিসেবে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।
নিয়ম মেনে বাস্তবায়ন পূর্ববর্তী সরকারি আদেশ যেমন 05/01/2021 তারিখের 30-F(Y) মেমো এবং 18/08/2017 তারিখের 1974/PN মেমো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
অডিট ও স্বচ্ছতা প্রতিটি প্রস্তাবিত কাজের জন্য অর্থ ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও যাচাই করতে হবে এবং খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এই নির্দেশিকাগুলো কার্যকর হলে কাজের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে।

অর্থাৎ, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি স্তরে কাজের স্বচ্ছতা, সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা।

 এই নিয়ম বাস্তবায়নের তাৎপর্য

নতুন নির্দেশিকা কার্যকর হলে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে—

  • দ্রুত সমস্যা সমাধান: সাধারণ মানুষের ছোটখাটো সমস্যা যেমন রাস্তা, নিকাশি বা আলো সংক্রান্ত বিষয় আগের তুলনায় দ্রুত সমাধান হবে। এই সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য মানুষকে আর কোথাও দৌড়াতে হবে না।
  • স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: প্রতিটি কাজ যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে, ফলে দুর্নীতি বা অর্থ অপচয়ের সম্ভাবনা কমবে। সরাসরি সরকারের তরফ থেকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করা হবে।
  • অর্থের সঠিক ব্যবহার: সরকারি তহবিল সঠিক খাতে ব্যবহার হবে, কাজের মান বজায় রাখা সম্ভব হবে। এর ফলে কোন খাতে কত টাকা খরচ হল সমস্ত হিসেব সরকারের কাছে থাকবে।
  • জনগণের আস্থা বৃদ্ধি: সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা আরও দৃঢ় হবে।

 সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব

এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে সরাসরি সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। এর ফলে গ্রামের বা পাড়ার রাস্তা খারাপ হলে দ্রুত মেরামত হবে সরকারের তরফ থেকে। জল নিকাশি জটিলতা বা জল জমার সমস্যা কমবে। পানীয় জলের সঠিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে এবং ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে যাবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় স্ট্রিট লাইট বসানো বা মেরামত সহজ হবে।

অর্থাৎ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং মানুষ প্রশাসনিক স্তরে ভরসা ফিরে পাবেন।

এছাড়া, সাধারণ মানুষ যাতে অবগত হতে পারেন, তার জন্য অর্থ দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই নির্দেশিকা প্রকাশ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 জনগণের প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়া

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস আছে। অনেকের আশা, এই নতুন নিয়মে প্রকল্পের গতি আরও বাড়বে। রাস্তা খারাপ হলে আগে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে না, এখন দ্রুত কাজ হবে। আগে জল পাইপলাইনের সমস্যা থাকলেও কেউ শুনত না, এবার সরাসরি সমাধান হবে। এছাড়াও সমস্ত ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা এখানে পাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত হবে।

তবে, সরকার জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা (যেমন—অনলাইন মনিটরিং, জিও-ট্যাগিং ইত্যাদি) চালু করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।

‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ (APAS Scheme) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর ফলে পাড়ায় পাড়ায় সমস্ত সমস্যার সমাধান করা হবে। নতুন নির্দেশিকার ফলে কাজের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। স্থানীয় স্তরের ছোটখাটো সমস্যা দ্রুত সমাধান হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং সরকারের উপর আস্থা আরও দৃঢ় হবে।

অতএব, এই প্রকল্প শুধু একটি উন্নয়নমূলক স্কিম নয়, বরং মানুষ ও প্রশাসনের মধ্যে এক সেতুবন্ধন, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের মেলবন্ধন আরো ভালো হবে।