বর্তমান সময়ের আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ক্রমবর্ধমান খরচের মধ্যে সঞ্চয়ের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর প্রত্যেকটি মানুষ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখছেন এর জন্য —প্রত্যেক মানুষ আজ নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধান করছেন। বর্তমান দিনে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা ভাবনা করে দিনে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে আপনি হতে পারেন ৩৫ লক্ষ টাকার মালিক। আরো সবথেকে বড় কথা হলো এটি ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত পোস্ট অফিসের একটি স্কিম তাই এখানে কোনরকম ঝুঁকি নেই। কারণ সবাই চায় এমন একটি প্ল্যান, যা ঝুঁকিমুক্ত হবে, ভবিষ্যতে পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা দেবে এবং একইসঙ্গে মোটা রিটার্নও এনে দেবে।

এমন পরিস্থিতিতে পোস্ট অফিস নিয়ে এসেছে এক অনন্য পরিকল্পনা—গ্রাম সুরক্ষা যোজনা (Gram Suraksha Yojana)। সাধারণ মানুষদের জন্য পোস্ট অফিসের তরফ থেকে আনা হয়েছে এই স্কিম। এখানে প্রতিদিন মাত্র ৫০ টাকা জমিয়ে ভবিষ্যতে হাতে আসতে পারে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। তাই আপনি যদি আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হন তাহলে অবশ্যই আপনি এই স্কিমে নাম লেখাতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই স্কিমে রয়েছে বিমার সুবিধাও। তাই বিনিয়োগকারীরা একসাথে পাচ্ছেন বিমা + সঞ্চয় + গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন

 গ্রাম সুরক্ষা যোজনা কী?

গ্রাম সুরক্ষা যোজনা মূলত ভারতীয় ডাক বিভাগের অধীনে চালু হওয়া গ্রামীণ ডাক জীবন বিমা (RPLI)-এর একটি জনপ্রিয় স্কিম। খুবই সাধারণ পরিবারের মানুষেরাও এই স্কিমে নাম লেখাতে পারবেন। যদিও এর নামের মধ্যে “গ্রাম” শব্দ আছে, এটি কেবল গ্রামীণ মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। শহরের মানুষও এই পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে পারেন। গ্রাম থেকে শহর সকলেই এই স্কিমের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।।

এই স্কিমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনাকে প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়। মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীকে বোনাসসহ একটি মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়া হয়। অন্যান্য স্কিমের তুলনায় এটি অনেক সহজ এবং সকলের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়া মাঝপথে প্রয়োজনে লোন নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। অর্থাৎ সঞ্চয়ের পাশাপাশি হঠাৎ কোনও আর্থিক প্রয়োজনে এটি কার্যকরী সহায়ক হতে পারে।

কেন এই স্কিম এত জনপ্রিয়?

আজকের দিনে বাজারে অসংখ্য বিনিয়োগের পথ খোলা আছে—মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার, FD, PPF ইত্যাদি। তবে সেগুলো মোটে ও রিস্ক ফ্রি নয় এবং সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে যারা ঝুঁকি নিতে চান না বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষজন তাদের জমানো অর্থ এখানের সঞ্চয় করে রাখলে ভবিষ্যতে তারা মোটা অংকের রিটার্ন পান। তাই তাদের জন্য পোস্ট অফিসের গ্রাম সুরক্ষা যোজনা একেবারে উপযুক্ত।

এছাড়াও এই স্ক্রিমটে জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এই স্কিম জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—

  • সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত: অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে কারণ এখানে সরকার গ্যারান্টিযুক্ত তাই আপনার টাকা সুরক্ষিত থাকবে এখানে।
  • বিমা ও সঞ্চয় একসাথে: হঠাৎ কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয় অর্থাৎ আপনি এখান থেকে যেকোনো সময়ে বীমা পেতে পারেন জীবন বীমার সুরক্ষা রয়েছে এখানে।
  • বোনাস সুবিধা: প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বোনাস যোগ হয়। অর্থাৎ আপনার জমা টাকার উপর আপনি আরো অতিরিক্ত টাকা পেয়ে যাবেন।
  • কর ছাড়: ধারা 80C অনুযায়ী করছাড় পাওয়া যায়।
  • লোনের সুযোগ: জরুরি প্রয়োজনে স্কিমের বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়। আপনার যদি টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার এই স্কিমটি ভাঙতে হবে না বরং আপনি ব্যাংকের থেকে বা পোস্ট অফিসের থেকেও এই স্কিম দেখিয়ে লোন নিতে পারেন।
  • নমিনি সুবিধা: বিনিয়োগকারীর অনুপস্থিতিতে পরিবারের হাতে টাকা পৌঁছে যাবে।

কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন?

গ্রাম সুরক্ষা যোজনায় যোগ দেওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে।

শর্ত বিবরণ
বয়স ১৯ থেকে ৫৫ বছর
নাগরিকত্ব শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক
সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ₹১০,০০০
সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ₹১০ লক্ষ
নমিনি বাধ্যতামূলক
স্বাস্থ্য শংসাপত্র নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে

অর্থাৎ, একজন যুবক যেমন এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন, তেমনই মধ্যবয়সী কর্মী বা কৃষকও এতে যোগ দিতে পারবেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের সকলেই এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন

কিস্তি ও মেয়াদের ধরন

এই স্কিমে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের সুবিধামতো কিস্তি দিতে পারেন—

  • ক্ষেত্রে কেউ যদি চায় মাসিক কিস্তি জমা দেবে তাহলে সে মাসিক হারে কিস্তি জমা দিতে পারে।
  • ত্রৈমাসিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ তিন মাস পর পর কিস্তি জমা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
  • অর্ধ-বার্ষিক অর্থাৎ কেউ যদি চায় বছরে দুবার টাকা জমা দেবে তারাও এই সুবিধা পেয়ে যাবেন।
  • এছাড়াও কেউ যদি বার্ষিক একবারে টাকা জমা দিতে চান তাহলেও এখানে সেই সুবিধা রয়েছে।

বোনাস, ঋণ ও সারেন্ডার সুবিধা

গ্রাম সুরক্ষা যোজনা শুধুমাত্র সঞ্চয় নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা—

  1. বোনাস: ৫ বছর পর থেকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বোনাস যোগ হয়।
  2. ঋণ সুবিধা: ৪ বছর পর স্কিমের বিপরীতে লোন নেওয়া যায়।
  3. সারেন্ডার সুবিধা: ৩ বছর পর চাইলে পলিসি বন্ধ করে নির্দিষ্ট টাকা ফেরত নেওয়া যায়।

 বয়সভিত্তিক রিটার্নের টেবিল

বয়স মাসিক প্রিমিয়াম (প্রায়) মেয়াদ (বছর) মেয়াদ শেষে রিটার্ন
১৯ বছর ₹১,৫১৫ ৫৫ ₹৩১.৬০ লক্ষ
২১ বছর ₹১,৫৪০ ৫৮ ₹৩৩.৪০ লক্ষ
২৫ বছর ₹১,৫৬০ ৬০ ₹৩৪.৬০ লক্ষ

 কীভাবে আবেদন করবেন?

🔹 অফলাইনে আবেদন

এখানে অনলাইন এবং অফলাইন দুটো পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। অফলাইনে আবেদন করতে হলে প্রথমে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে গিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র ও আবেদনের ফরমটি পূরণ করে সমস্ত কিছু একত্রে জমা দিতে হবে। এরপরে কি হারে আপনি প্রিমিয়াম দেবেন সেটি নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রথম কিস্তি দিয়ে এটি চালু করতে হবে।

🔹 অনলাইনে আবেদন

এখানে কেউ চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবে নিজে নিজে। এক্ষেত্রে-

  1. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান – India Post Official
  2. Insurance > RPLI সেকশন সিলেক্ট করুন
  3. ফর্ম পূরণ করে ডকুমেন্ট আপলোড করুন
  4. KYC সম্পন্ন করে সাবমিট করুন

তবে এখানে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই একবার ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে তারপর বিনিয়োগ করবেন।

আজকের দিনে সঞ্চয় শুধু অভ্যাস নয়, এটি একটি অপরিহার্য দায়িত্ব। পরিবার ও নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে হলে ঝুঁকিমুক্ত সঞ্চয় পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করা দরকার। ভবিষ্যতের জন্য এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে প্রত্যেকেরই দরকার বিনিয়োগ করা।

পোস্ট অফিসের গ্রাম সুরক্ষা যোজনা সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। দিনে মাত্র ₹৫০ জমিয়েই ৩৫ লক্ষ টাকার গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। অল্প কিছু টাকা জমা করে আপনি মোটা অংকের রিটার্ন পাবেন এখানে গ্যারান্টি সহকারে। উপরন্তু বিমার সুবিধা থাকায় এটি একদিকে যেমন ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় তৈরি করছে, অন্যদিকে আকস্মিক বিপদে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে।

এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—শহর হোক বা গ্রাম, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত—প্রত্যেক মানুষের জন্য এই স্কিম একটি সেরা বিকল্প হতে পারে।