অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গেল যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। ইতিমধ্যেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে জরুরী নির্দেশ জারি করা হয়েছে এবং এই নির্দেশে বলা হয়েছে , ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখার বিশেষ অভিযান শুরু করতে হবে এবং এই অভিযান শেষ হবে ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ মধ্যে। মূলত এটি করা হচ্ছে — ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য। দীর্ঘ ২৩ বছর পর আবারও রাজ্যে নতুন করে ভোটার তালিকা সংশোধন বিশেষ প্রয়োজন।

কেন প্রয়োজন ভোটার তালিকা সংশোধন?
ভারত হল বিশ্বের মধ্যে সর্ব বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ এবং এই দেশে ভোটার তালিকা নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার মেরুদণ্ড। তাই এই তালিকার সংশোধন বিশেষ প্রয়োজন এবং তালিকায় যদি ভুল থাকে, তাহলে—
- মৃত ব্যক্তির নাম থেকে যায় তাহলে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে সরাতে হবে।
- একই ভোটারের নাম একাধিক জায়গায় পাওয়া যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির নাম বাতিল করতে হবে।
- নতুন ভোটার বাদ পড়ে যায়, তাহলে নতুন ভোটারের নাম তালিকায় যুক্ত করতে হবে।
- ঠিকানা বা বানানে অসঙ্গতি থেকে যায়। তাহলে ভোটার তালিকায় খুব দ্রুত সেই সমস্ত সমস্ত কিছু করতে হবে।
- অবৈধ ভোটার ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে হবে
এসব সমস্যা শুধু নির্বাচনী বিভ্রান্তিই নয়, ভুয়ো ভোটদান ও জনগণের আস্থা হারানোর ঝুঁকিও তৈরি করে। কারণ সন্তানের মাধ্যমেই ভারতে গণতন্ত্র রক্ষা হয়। তাই এবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখেই তালিকা মিলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কীভাবে হচ্ছে তালিকা মিলিয়ে দেখা?
এই অভিযানে বিশেষভাবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা এবং ২০২৫ সালের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। দু’টি তালিকার মধ্যে নাম, ঠিকানা, বয়সসহ সব তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। পূর্ব রেকর্ড এর সঙ্গে বর্তমান রেকর্ডে যে সমস্ত মিল রয়েছে সেই সমস্ত তথ্য খাঁতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ধাপ | কীভাবে কাজ হচ্ছে |
---|---|
তথ্য যাচাই | BLO-রা হাতে পাচ্ছেন ২০০২ সালের হার্ড কপি এবং ২০২৫ সালের চূড়ান্ত তালিকা। ভোটারদের নাম ধরে ধরে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের পুরনো তালিকায় নাম রয়েছে তাদের কোন সমস্যা নেই। |
পিতামাতার তথ্য যাচাই | কোনো ভোটারের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না থাকলে বাবা/মায়ের নাম দিয়ে তথ্য নিশ্চিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাবা মায়ের নাম পুরনো ভোটার তালিকায় থাকলে তার কোন সমস্যা নেই। |
প্রতিদিন রিপোর্ট জমা | BLO-দের প্রতিদিন Annexure 1 ফরম্যাটে রিপোর্ট দিতে হবে স্থানীয় ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO)-র কাছে। কোন সমস্যা থাকলে জানাতে হবে। |
অনলাইন আপডেট | জেলা নির্বাচনী আধিকারিকরা (DEO) Annexure 2 ফরম্যাটে প্রতিদিন অনলাইনে তথ্য আপডেট করছেন। |
নজরদারি | BLO সুপারভাইজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO) ও ERO-রা প্রতিটি ধাপ তদারকি করছেন। |
বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) ভূমিকা
ভোটার তালিকা সংশোধনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন BLO-রা। এরাই এই ভোটার তালিকা সংশোধনী সার্ভে করবেন।
তাঁদের দায়িত্ব হলো—
- ভোটার তালিকার নাম মিলিয়ে দেখা, কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে সেগুলো খাতিয়ে দেখা
- প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা, সমস্ত তথ্য ভালোভাবে যাচাই করা
- প্রয়াত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া, মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে পুরোপুরি ভাবে মুছে দিতে হবে
- নতুন ভোটারদের তথ্য নথিভুক্ত করা, যাদের নতুন তালিকা নাম নথিভুক্ত হয়নি তাদের নাম নথিভুক্ত করা।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট রিপোর্ট জমা দেওয়া।
নির্বাচন কমিশনের নজরদারি
এই প্রক্রিয়ায় ভারতের নির্বাচন কমিশন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছে।
- ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর: সিনিয়র ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার ভিডিও কনফারেন্সে অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন। কিভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সংশোধন করা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হবে।
- ২০ সেপ্টেম্বর: পুরো কাজের সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হবে। এবং এরপর থেকেও শুরু হবে রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন।
এর ফলে মাঠপর্যায়ে কাজের গতি ও গুণমান নিশ্চিত করা যাবে এবং কিভাবে সার্ভে করা হচ্ছে সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।
সাধারণ মানুষের ভূমিকা
ভোটার তালিকা সংশোধনে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
BLO যখন আপনার বাড়িতে আসবেন তখন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের সমস্ত তথ্য ঠিকভাবে দিতে হবে, এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের—
- সঠিক নাম, ঠিকানা, বয়স জানাতে হবে।
- যদি কোনো ভুল পান, সঙ্গে সঙ্গে জানান।
- নিজের নাম ও পরিবারের নাম তালিকায় আছে কিনা যাচাই করুন।
এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষ এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। অনেকের বিভিন্ন দিন ধরে ভোটার তালিকায় বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তি ছিল সেগুলো ঠিক করা হবে। যাদের নাম নতুন করে ভোটার তালিকায় উঠবে তারা এখান থেকে ভোটার তালিকা নাম তুলতে পারবেন।
কেন এই পদক্ষেপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ?
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়নি তাই এটি বিশেষ প্রয়োজন। এই সংশোধন অভিযানের ফলে—
- ভোটার তালিকা আরও স্বচ্ছ ও নির্ভুল হবে।
- মৃত বা ভুয়ো নাম বাদ যাবে।
- নতুন ভোটাররা নিশ্চিতভাবে যুক্ত হবেন।
- আগামী নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
এটি নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ধরা হবে। তাই ভোটার তালিকা সংশোধন বিশেষ প্রয়োজন।
SIR West Bengal–এর অধীনে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযান সাধারণ ভোটারের কাছে এক নতুন আস্থা তৈরি করবে। ভোটার তালিকা সঠিক থাকলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে, আর গণতন্ত্র হবে আরও সুসংহত। অবৈধ ভাবে যারা ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন তাদের নাম বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যখনই আপনার এলাকায় BLO আসবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। মনে রাখবেন, আপনার দেওয়া সঠিক তথ্যই আগামী দিনের সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। কোন ভুল তথ্য দিলে পরবর্তী কালে আরও বেশি সমস্যাই পড়তে পারেন।

Our team has been engaged in professional content writing for the past 5 years. With extensive experience in creating high-quality, SEO-friendly, and reader-focused articles, we specialize in delivering accurate information on government schemes, education, jobs, technology, and news updates. Our goal is to provide clear, reliable, and engaging content that adds real value to readers while maintaining the highest editorial standards.