ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে প্রতিটি সরকারি নথি ধীরে ধীরে কম্পিউটারাইজড আকারে রূপান্তরিত হচ্ছে। আগে জন্ম সনদ বা জন্ম নিবন্ধন পত্র সাধারণত হাতে লেখা অবস্থায় দেওয়া হত। অনেক মানুষের কাছে আজও সেই পুরোনো, হাতে লেখা জন্ম সনদই একমাত্র প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে। কিন্তু এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল জন্ম সনদ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি, সরকারি চাকরির আবেদন, আধার বা পাসপোর্ট তৈরি, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেওয়া—সবকিছুর জন্য ডিজিটাল জন্ম সনদ আবশ্যক। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য মানুষ জানতে চাইছেন কিভাবে পুরোনো হাতে লেখা জন্ম সনদকে ডিজিটাল সনদে রূপান্তর করা যায়।

এই প্রতিবেদনে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে পুরোনো হাতে লেখা জন্ম সনদকে ডিজিটাল আকারে রূপান্তর করা সম্ভব।

কেন দরকার ডিজিটাল জন্ম সনদ?

হাতে লেখা জন্ম সনদ একসময় যথেষ্ট হলেও বর্তমানে তা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর পিছনে রয়েছে কয়েকটি বড় কারণ—

প্রথমত, হাতে লেখা জন্ম সনদের মধ্যে প্রায়ই বানান ভুল, তারিখের অসঙ্গতি বা তথ্য ঘাটতি থাকে। এই ধরনের সনদ অনেক সময় সরকারি দপ্তর বা বিদেশে ব্যবহার করার সময় গৃহীত হয় না।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল সনদের মধ্যে একটি ইউনিক নম্বর ও কিউআর কোড থাকে, যা অনলাইনে যাচাই করা যায়। এর ফলে জালিয়াতির সুযোগ থাকে না।

তৃতীয়ত, ডিজিটাল সনদ হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। যেকোনো সময় অনলাইনে ডাউনলোড করা যায়।

চতুর্থত, সরকারি প্রকল্পে আবেদন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন ডিজিটাল সনদই গ্রহণযোগ্য।

আপনার জন্ম সনদ কি ইতিমধ্যেই ডিজিটাল?

অনেক সময় দেখা যায় যে পুরোনো জন্ম সনদের তথ্য ইতিমধ্যেই সরকারের অনলাইন ডেটাবেসে আপলোড করা হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ডিজিটালাইজ করার আগে অনলাইনে একবার খুঁজে দেখা জরুরি।

কীভাবে চেক করবেন:

১. প্রথমে যান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে: janmamrityutathya.wb.gov.in
২. সেখানে গিয়ে Citizen Services মেনু থেকে Birth অপশনটি বেছে নিন।
৩. এবার Check Status বা Download Certificate এ ক্লিক করুন।
৪. সার্চ বক্সে আপনার নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের নাম অথবা পুরোনো সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখুন।
৫. যদি আপনার তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায় এবং ডাউনলোড করার অপশন আসে, তবে বুঝবেন আপনার জন্ম সনদ ইতিমধ্যেই ডিজিটাল হয়েছে।

যদি না পাওয়া যায়, তবে অফলাইনে আবেদন করতে হবে।

অফলাইনে হাতে লেখা জন্ম সনদকে ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সরাসরি অনলাইনে হাতে লেখা জন্ম সনদকে ডিজিটালাইজ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে আবেদন করতে হয়।

কোথায় যাবেন:

  • গ্রামাঞ্চলে: আপনার গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যোগাযোগ করুন।
  • শহরে: সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফিসে যেতে হবে।
  • হাসপাতালে জন্ম হলে: জন্মের সময় যে হাসপাতালে জন্ম রেকর্ড করা হয়েছে, সেই হাসপাতালের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।

দরকারি কাগজপত্র

আবেদন করার সময় নিম্নলিখিত কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে—

  • পুরোনো হাতে লেখা জন্ম সনদের মূল কপি ও ফটোকপি
  • পিতামাতার পরিচয়পত্র (ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি)
  • আবেদনকারীর পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • সক্রিয় মোবাইল নম্বর (যাতে আপডেট পাঠানো হবে)
  • আবেদনপত্র (যা অনেক ক্ষেত্রে অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হয়)

আবেদন জমা দেওয়ার পর কী হবে?

অফিসে নথিপত্র জমা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সমস্ত তথ্য যাচাই করবেন।
যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পুরোনো তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হবে।
একটি কনফার্মেশন মেসেজ আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বরে যাবে।
এরপর কয়েকদিনের মধ্যে আপনি অনলাইনে সার্চ করে আপনার ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন।

সাধারণ সমস্যাগুলি এবং সমাধান

  • নাম মেলেনি: অনেক সময় হাতে লেখা জন্ম সনদে বানান ভুল থাকে। এ ক্ষেত্রে সংশোধনের আবেদন করতে হয়।
  • তারিখের অসঙ্গতি: যদি জন্ম তারিখ ভিন্ন হয় তবে হলফনামা (Affidavit) জমা দিতে হতে পারে।
  • নিবন্ধন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না: পুরোনো সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলে তা দিয়ে খোঁজা সহজ হয়। নম্বর হারিয়ে গেলে বাবা-মায়ের নাম দিয়ে সার্চ করতে হয়।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জন্ম ও মৃত্যুর নথিকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরে ধাপে ধাপে সমস্ত পুরোনো সনদ অনলাইনে আপলোড করা হবে। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো আলাদা করে আবেদন করার দরকার পড়বে না।

বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, প্রক্রিয়াটি সহজ হলেও সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় আবেদন জমা দেওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। তবে একবার সনদ ডিজিটালাইজ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে আর কোনো ঝামেলা থাকে না। অনেকে আবার জানিয়েছেন, একবারে সব তথ্য সঠিক থাকলে সনদ মাত্র ৭–১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে পাওয়া যায়।

আজকের দিনে ডিজিটাল জন্ম সনদ একটি অপরিহার্য নথি। হাতে লেখা সনদ থাকলে এখনই সেটি ডিজিটাল আকারে রূপান্তর করা উচিত। প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ একবার ডিজিটাল সনদ তৈরি হয়ে গেলে তা হারানোর ভয় নেই, যেকোনো সময় ডাউনলোড করা যায় এবং সর্বত্র গ্রহণযোগ্য হয়।