ভারতের নাগরিকদের জন্য আধার কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য নথি। সমস্ত ক্ষেত্রে আধার কার্ড প্রয়োজন হয়। যেকোনো সরকারি কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যাংক একাউন্ট খোলা সিম কার্ড কেনা জমি রেজিস্ট্রি করা থেকে সমস্ত ধরনের সরকারি কাজকর্মে আধার কার্ড দরকার। প্রত্যেকটি ভারতের নাগরিকদের জন্য আধার কার্ড বাধ্যতামূলক। কিন্তু এবার UIDAI (Unique Identification Authority of India) এক নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যা অনুযায়ী যাদের আধার কার্ড ১০ বছরের বেশি পুরনো, তাদের অবশ্যই আপডেট করতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—কেন এই আপডেট প্রয়োজন? কাদের জন্য বাধ্যতামূলক? কীভাবে এই আপডেট করা যাবে? আর যদি কেউ আপডেট না করেন, তবে কী সমস্যা হতে পারে? চলুন বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
কেন আধার আপডেট বাধ্যতামূলক করা হলো?
ভারতবর্ষ ডিজিটাল ভারতের রূপান্তরিত হতে চেয়েছিল এজন্য প্রত্যেকটি নাগরিকের আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক কারণ আধার কার্ডের সঙ্গে ভারতের প্রত্যেকটির নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পরিবর্তন ঘটে ঠিক সেই কারণে আধার কার্ডেরও পরিবর্তন করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কারো কারো ঠিকানা বদলেছে বা কারো নামের বানান ভুল রয়েছে বা অনেকের মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল আইডি অ্যাড করা নেই। যাদের এই সমস্ত সমস্যা রয়েছে তাদের আধার কার্ড পরিবর্তন করাতে হবে অথবা যাদের ১০ বছরের বেশি পুরনো আধার কার্ড রয়েছে এবং একবারও পরিবর্তন হয়নি তাদেরও আধার কার্ড আপডেট করতে হবে। না হলে আধার কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
UIDAI জানিয়েছে, দশ বছরের বেশি পুরনো আধার কার্ডে তথ্য ভুল থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও পুরনো আধার কার্ডে অনেক তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে, অনেকে এখনও পুরনো ঠিকানা ব্যবহার করছেন, কারও কারও আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক নেই, আবার অনেকে নাম বা জন্ম তারিখে ভুলের কারণে সমস্যায় পড়ছেন। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে UIDAI বলেছে—প্রতি ১০ বছর পর আধার আপডেট করা প্রয়োজন।
আধারে কোন কোন তথ্য আপডেট করা যায়?
আধার কার্ড মূলত দুই ধরণের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়—ডেমোগ্রাফিক তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য। আধার কার্ডের সব ধরনের তথ্য নিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব।
- ডেমোগ্রাফিক তথ্য
- নাম
- জন্মতারিখ
- লিঙ্গ
- ঠিকানা
- মোবাইল নম্বর
- ইমেইল আইডি
UIDAI-এর নিয়ম অনুযায়ী,
- নাম সর্বাধিক দু’বার পরিবর্তন করা যায়।
- জন্মতারিখ বা লিঙ্গ একবার পরিবর্তনের সুযোগ আছে।
- ঠিকানা ইচ্ছামতো বারবার পরিবর্তন করা যায়।
- মোবাইল নম্বর অবশ্যই আধার সেবা কেন্দ্রে গিয়ে লিঙ্ক করতে হয়।
- বায়োমেট্রিক তথ্য
- ছবি
- আঙুলের ছাপ
- চোখের মণির স্ক্যান
শিশুদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়মিত আপডেট করতে হয়, কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও ১০ বছরের বেশি পুরনো তথ্য অনেক সময় কাজে আসে না। বাচ্চাদের আঁধার কার্ড কিছুদিন পরপর পরিবর্তন করতে হয় দীর্ঘদিন পরিবর্তন না করলে শিশুটির বায়োমেট্রিকের সঙ্গে আধার কার্ডের মিল থাকবে না।
কীভাবে আধার আপডেট করবেন?
আধার আপডেট করার দুটি প্রধান উপায় রয়েছে।
- অনলাইনে আপডেট
এক্ষেত্রে ঘরে বসে নিজেরাও আবেদন জানাতে পারবেন। যাদের আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করা আছে, তারা UIDAI-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা mAadhaar অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই অনেক তথ্য আপডেট করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না নিজে নিজেই সমস্ত কাজ করা সম্ভব শুধুমাত্র মোবাইল নাম্বার আধারের সঙ্গে লিংক থাকতে হবে। এখানে ঠিকানা পরিবর্তন, নামের ছোটখাটো ভুল সংশোধন বা ইমেইল আইডি যুক্ত করার মতো কাজ অনলাইনে সম্ভব। - অফলাইনে আপডেট
যাদের আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যুক্ত নেই বা যাদের বায়োমেট্রিক তথ্য পরিবর্তন করতে হবে, তাদের অবশ্যই নিকটবর্তী Aadhaar Seva Kendra বা Enrolment Centre-এ গিয়ে আপডেট করতে হবে। সশরীরে গিয়ে বায়োমেট্রিক রেকর্ড জমা দিতে হয় এবং সেখানেই সংশোধন সম্পন্ন হয়। এছাড়া যে সমস্ত সমস্যার রয়েছে সেখানে তাদের জানাতে হবে এবং এখান থেকে সমস্ত ধরনের সমস্যার সমাধান করা যাবে। এছাড়াও যাদের ১০ বছরের পুরনো আধার কার্ড হয়েছে তারা এখন থেকে আপডেট করিয়ে নিতে পারবেন।
কত খরচ পড়বে?
এক্ষেত্রে কোনরকম খরচে দরকার পড়বে না। আপনি যদি বাড়িতে বসে নিজে নিজে করতে চান তাহলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপডেট করাতে পারবেন কিন্তু যদি আধার সেবা কেন্দ্রে গিয়ে আপডেট করেন তাহলে আপনার 50 থেকে 100 টাকার মতো খরচ হতে পারে।
যদি আপডেট না করেন তবে কী হবে?
UIDAI স্পষ্ট জানিয়েছে, যদি আপনার আধার কার্ড ১০ বছরের বেশি পুরনো হয় এবং আপডেট না করেন, তবে ভবিষ্যতে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যাংক একাউন্ট খোলা বা প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করা আটকে যেতে পারে বা সরকারি বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি, পেনশন, স্কলারশিপ বা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পেতে অসুবিধা হবে। এছাড়াও বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশনের সময় সমস্যা হতে পারে, ফলে আধার যাচাই ব্যর্থ হবে। তাই যেকোনো সমস্যায় পড়ার আগে অবশ্যই আধার কার্ড আপডেট করিয়ে নেওয়া দরকার।
আধার কার্ড এখন কেবল পরিচয়পত্র নয়, বরং ডিজিটাল ভারতের অন্যতম স্তম্ভ। আধার কার্ড ছাড়া ডিজিটাল ইন্ডিয়া কখনোই সম্ভব নয়। UIDAI-এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যাদের আধার কার্ড ১০ বছরের বেশি পুরনো, তাদের আপডেট করা বাধ্যতামূলক। আধার কার্ড আপডেট না করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এতে তথ্য সর্বদা সঠিক থাকবে এবং নাগরিকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সব সরকারি-বেসরকারি পরিষেবা পেতে পারবেন। তাই এখনই আপনার আধার কার্ড চেক করুন, যদি ১০ বছরের বেশি পুরনো হয় তবে দেরি না করে দ্রুত আপডেট করুন।

Our team has been engaged in professional content writing for the past 5 years. With extensive experience in creating high-quality, SEO-friendly, and reader-focused articles, we specialize in delivering accurate information on government schemes, education, jobs, technology, and news updates. Our goal is to provide clear, reliable, and engaging content that adds real value to readers while maintaining the highest editorial standards.