ভারতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। এছাড়াও বর্তমান দিনে ভারতবর্ষে পাসপোর্ট এর গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে কারণ পাসপোর্ট হল নাগরিকত্ব প্রমাণের একটি উল্লেখযোগ্য নথি। এবার ঘরে বসেই আপনি বানাতে পারবেন এই পাসপোর্ট। এতদিন আমরা ব্যবহার করতাম প্রচলিত কাগজ-ভিত্তিক পাসপোর্ট, কিন্তু এখন দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে আরও এক ধাপ। বর্তমান হচ্ছে ডিজিটাল যুগ এবং ডিজিটাল যুগের সমস্ত কিছু ডিজিটালই সম্ভব তাই এবার ঘরে বসেই আপনি বানাতে পারবেন e-Passport। ২০২৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর ২০২৫ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে e-Passport পরিষেবা। এটি কেবল একটি পাসপোর্ট নয়, বরং একটি স্মার্ট ডিজিটাল ডকুমেন্ট যা ভ্রমণকে করবে আরও নিরাপদ, দ্রুত ও স্বচ্ছ। এছাড়াও পাসপোর্ট নাগরিকত্ব প্রমাণের সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নথি।

e-Passport কী?

e-Passport হলো প্রচলিত পাসপোর্টের একটি উন্নত সংস্করণ। এর ভেতরে একটি Radio Frequency Identification (RFID) চিপ রয়েছে। এই চিপে যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং বায়োমেট্রিক ডেটা যেমন আঙুলের ছাপ, মুখের ছবি এবং আইরিস স্ক্যান সংরক্ষিত থাকে। এর ফলে এই পাসপোর্ট আরো গ্রহণযোগ্য এবং এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। ফলে ভ্রমণকারীর পরিচয় যাচাই করা হয় আরও দ্রুত ও নিরাপদভাবে। এছাড়াও সব থেকে বড় কথা হলো এটি ঘরে বসে যে কেউ বানাতে পারবেন।

এক নজরে বৈশিষ্ট্য:

বৈশিষ্ট্য বিবরণ
কভার প্রচলিত নীল/কূটনৈতিক/অফিসিয়াল রঙ, তবে সামনে ছোট সোনালি চিপের প্রতীক
প্রযুক্তি RFID চিপ
তথ্য নাম, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ছবি, বায়োমেট্রিক ডেটা
নিরাপত্তা ICAO মানদণ্ড অনুযায়ী এনক্রিপশন
সুবিধা দ্রুত ইমিগ্রেশন, জালিয়াতি প্রতিরোধ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি

কেন ই-পাসপোর্ট প্রয়োজন?

ভারত বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ভ্রমণকারী দেশ। প্রতিবছর কোটি কোটি ভারতীয় বিদেশে যান কাজ, পড়াশোনা বা পর্যটনের উদ্দেশ্যে। প্রচলিত পাসপোর্টে জালিয়াতি, নকল, তথ্য বিকৃতি এবং সীমান্তে দেরির মতো সমস্যা দেখা দিত। এছাড়াও কেন্দ্র সরকার বলেছে পাসপোর্ট হল ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের সর্বপেক্ষা গ্রহণযোগ্য নথি এবং এই পাসপোর্ট থাকলে ভোটার তালিকা সংশোধনেও নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।

ই-পাসপোর্ট চালুর মূল কারণগুলো হলো:

  • জালিয়াতি প্রতিরোধ: যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি তাই চিপে থাকা তথ্য এনক্রিপ্টেড থাকে, তাই হ্যাক বা কপি করা প্রায় অসম্ভব।
  • দ্রুত যাচাই: বিমানবন্দর ও সীমান্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাত্রীর ডেটা মিলিয়ে যাচাই হয়। এই ই পাসপোর্ট দ্রুততার সঙ্গে এবং নিরাপত্তার সঙ্গে যাচাই করা যায়।
  • আন্তর্জাতিক মান: ICAO (International Civil Aviation Organization) অনুমোদিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
  • ভবিষ্যত প্রস্তুতি: ডিজিটাল পাসপোর্ট বিশ্বে নতুন ট্রেন্ড। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান সহ বহু দেশ ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছে। তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতবর্ষেও এই পাসপোর্ট চালু করা হলো।

ই-পাসপোর্টে কী কী তথ্য থাকে?

ই-পাসপোর্ট শুধুমাত্র ভ্রমণ নথি নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পরিচয়পত্র। এখানে থাকে—

  • পাসপোর্ট নম্বর
  • নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ
  • পাসপোর্ট ইস্যু ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ
  • ধারকের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ
  • আঙুলের ছাপ ও আইরিস স্ক্যান
  • ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য

এতে করে ভ্রমণকারীর পরিচয় নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকে না। এছাড়াও এই পাসপোর্ট খুব দ্রুততার সঙ্গে যাচাই করা যায় এর ফলে আন্তর্জাতিক যাতায়াতের নিরাপত্তা আরো বৃদ্ধি পাবে।

কারা আবেদন করতে পারবেন?

ভারতের প্রত্যেক নাগরিকই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই পাসপোর্ট বাড়িতে বসে আবেদন করা সম্ভব। এটি কেবল নতুন আবেদনকারীদের জন্য নয়, পুরনো পাসপোর্টধারীরাও চাইলে নবীকরণ করে ই-পাসপোর্ট নিতে পারবেন।

যোগ্যতা:

  • এই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে
  • বৈধ পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখের প্রমাণ থাকতে হবে
  • ন্যূনতম ১৮ বছর (শিশুর ক্ষেত্রেও আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য)

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যায়।

ধাপসমূহ:

  1. Passport Seva Portal-এ (passportindia.gov.in) গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজেও রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারবেন।
  2. রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে লগইন করে e-Passport Application Form পূরণ করতে হবে।
  3. এক্ষেত্রে আবেদন করার সময় আপনি অবশ্যই নিকটবর্তী Passport Seva Kendra (PSK) বা Post Office Passport Seva Kendra (POPSK) বেছে নিতে হবে।
  4. এরপর আপনাকে অনলাইনে ফি প্রদান করতে হবে।
  5. এরপর পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি তারিখ দেওয়া হবে এবং সেই নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট কেন্দ্রে গিয়ে বায়োমেট্রিক ও ডকুমেন্ট যাচাই সম্পন্ন করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ফি

ফি আগের পাসপোর্টের মতোই রাখা হয়েছে। তবে এখানে বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট এর জন্য আলাদা আলাদা ফি রয়েছে। আপনি যে ক্যাটাগরি অনুযায়ী আবেদন করবেন সেই অনুযায়ী আপনাকে ফি প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা সাধারণ ক্যাটাগরির পাসপোর্ট বানাবেন তাদের কিছুদিন সময় লাগবে এবং একটু ধৈর্য ধরতে হবে। তবে যারা তৎকাল আবেদন করবেন তাদের খুব দ্রুত পাসপোর্ট বানানো হবে এটি মূলত ইমার্জেন্সি কারণে বানানো হয়। এখানে একটু খরচ বেশি হবে এবং খুব দ্রুত আপনারা হাতে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

ক্যাটেগরি ফি (৩৬ পৃষ্ঠা) ফি (৬০ পৃষ্ঠা)
সাধারণ আবেদন ₹1,500 ₹2,000
তাত্কাল আবেদন ₹3,500 ₹4,000

এপয়েন্টমেন্ট বুকিং

এক্ষেত্রে আবেদন জানানোর পরে আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করতে হবে। আপনি আপনার সুবিধামতো যে কোনদিন এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন আপনার সুবিধামতো এবং আপনি যেদিন ফ্রি থাকবেন সেদিন এ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করবেন কারণ সেই দিন আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত অফিশিয়াল ডকুমেন্টসগুলো পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে এবং সেখানে গিয়ে যাচাই ও ভেরিফিকেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে ডকুমেন্টসে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে আপনার পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডকুমেন্টস সমস্ত কিছু ঠিকঠাক করে তারপর পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করবেন।

আপনি আবেদন করার পরে অনলাইনের মাধ্যমে স্ট্যাটাস চেক করে দেখে নিতে পারবেন আপনার পাসপোর্ট এর আবেদনের তথ্য ও কত দিনে আপনি হাতে পাবেন সমস্ত কিছু এখান থেকে জানা যাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আবেদন করার সময় একটি নাম্বার দেবে সেই নাম্বার দিয়ে আপনি স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।

বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ এখন অনেক দ্রুততর হচ্ছে। ডিজিটাল বর্ডার কন্ট্রোল, স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন, স্মার্ট এয়ারপোর্ট—সবকিছুর সঙ্গে মিল রেখে ভারতের ই-পাসপোর্ট ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। বর্তমান উন্নত দেশগুলোতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল এবং ই পাসপোর্ট অনেকদিন আগেই চালু হয়ে গিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ভারতবর্ষেও এবার চালু হচ্ছে।

ভারতের ই-পাসপোর্ট পরিষেবা কেবল একটি নতুন নথি নয়, এটি দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার একটি প্রতীক। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতবর্ষেও নিরাপত্তার সঙ্গে এই ই পাসপোর্ট পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকে এটি এক বড় সাফল্য। ভ্রমণ আরও সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করতে ই-পাসপোর্ট হবে ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।