ভারতে এতদিন নাগরিকত্ব প্রমাণ নিয়ে নানা জটিলতা ছিল। এতদিন পর্যন্ত ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ ছিল জটিলতম বিষয়। আধার কার্ড, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট কিংবা জন্মসনদ—এসব নথি সমস্ত সরকারি কাজকর্মে ব্যবহার করা হলেও সবসময় তা নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অন্যান্য দেশে যেমন কার্ড রয়েছে আমাদের দেশে এতদিন পর্যন্ত তেমন কোন কার্ড ছিল না। এই দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে কেন্দ্র সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার কেন্দ্র সরকারের তরফে ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো চালু হতে চলেছে “স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড” (Smart Citizenship Card 2025), যা সরাসরি প্রতিটি ভারতীয়ের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবে। এই কার্ড থাকলে ভারতের সকলেই পাবেন নাগরিকত্ব।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য তৈরি হবে একটি একক পরিচয়পত্র, যা শুধু সরকারি কাজেই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, ভ্রমণ, আর্থিক লেনদেনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা যাবে। এটি একদিকে যেমন হবে ভারতের পরিচয় পত্র তেমনি অন্য দিকে নাগরিকত্বের জন্য নাগরিক প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

কেন প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড?

ভারতে নাগরিকত্ব প্রমাণের কোনও একক নথি এতদিন ছিল না। যে সমস্ত নথি এতদিন পর্যন্ত সরকারি কাজে ব্যবহার করা হতো বিশেষ করে আধার কার্ড বা ভোটার আইডি বা জন্ম সার্টিফিকেট যেটি অনেক সময় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হলেও এগুলো আইনত নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এগুলো শুধুমাত্র পরিচয় পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে তবে নাগরিকত্বের জন্য এবার কেন্দ্র সরকার নিয়ে এল স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড। প্রতিটি ভারতীয় জন্য এটি প্রয়োজন এবং বাধ্যতামূলকভাবে করা হবে।

বর্তমান দিনে অনেক সমস্যা হচ্ছে এমনকি দেখা যাচ্ছে ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বহু সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সময় সরকারি পরিষেবা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারায় তারা অনেক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের এই সমস্ত জটিলতা দূর করতেই কেন্দ্র সরকার এনেছে একক সমাধান—স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড

স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডে কী কী থাকবে?

এই নতুন কার্ডটি কেবল একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি-সক্ষম নাগরিকত্বের প্রমাণ। এই ডিজিটাল সিটিজেনশিপ কার্ডে থাকবে ব্যক্তির নাম, ছবি ও স্বাক্ষর। এছাড়াও এখানে জন্মতরিখ ও জন্মস্থান দেওয়া থাকবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা থাকবে ইউনিক সিটিজেনসিভ নাম্বার (UCN)। ডিজিটাল চিপ ও QR কোড যুক্ত করা হবে এবং এর সঙ্গে হোলোগ্রাফিক সিকিউরিটি ফিচারও থাকবে এছাড়াও সেখানে থাকবে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা সংযুক্তি। QR কোড স্ক্যান করলেই মুহূর্তে জানা যাবে, কার্ডধারী ভারতীয় নাগরিক কি না।

 

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে— ভারতের প্রতিটি নাগরিককে একক পরিচয়ের আওতায় আনাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এর ফলে ভারতের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হবে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তর কাজ সহজ হবে। এছাড়াও সাধারন ভারতীয়রা আর নাগরিকত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ থাকবে না এবং হয়রানের শিকার হবে না।

নাগরিকত্ব প্রমাণের বর্তমান নিয়ম

বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এতদিন পর্যন্ত যে আইন চলছিল সেটি হল-

  • ১৯৫০ – ১৯৮৭: ভারতে জন্মালেই সরাসরি নাগরিকত্ব।
  • ১৯৮৭ – ২০০৪: নাগরিকত্বের জন্য বাবা বা মায়ের একজন ভারতীয় হতে হবে।
  • ২০০৪-এর পর: বাবা-মা দুজনেরই নাগরিক হতে হবে।

এই নিয়ম অনেক সময় জটিলতা তৈরি করেছে, বিশেষত যাদের জন্মসনদ বা প্রয়োজনীয় নথি নেই। বিশেষ করে দেখা যায় যাদের জন্ম ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ এর মধ্যে তাদের পরিবারের বা তাদের পিতা-মাতার অনেকেরই জন্ম সনদ নেই তাই এক্ষেত্রে তারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সমস্যার সম্মুখীন হবে। এখন থেকে স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ হবে। এছাড়াও এই কার্ড নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য। প্রতিটি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতেই এই প্রকল্প আনা হয়েছে। তথ্য সুরক্ষায় থাকবে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কবে আসছে স্মার্ট কার্ড?

২০২৫ সালের শেষের দিকে কয়েকটি রাজ্যে ট্রায়াল রান শুরু হবে। ট্রায়াল সফল হলে ২০২৬ সালের মধ্যে সমগ্র দেশজুড়ে কার্যকর করা হবে। প্রথম ধাপে নির্বাচিত জেলাগুলোতে নাগরিকদের জন্য কার্ড বিতরণ হবে। ধাপে ধাপে প্রতিটি নাগরিককে এই কার্ড দেওয়া হবে বিনামূল্যে

আবেদন প্রক্রিয়া

সরকার এখনও চূড়ান্ত গাইডলাইন প্রকাশ করেনি। তবে এক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে যখন নতুন আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছিল যে পদ্ধতিতে, তথ্য যাচাই ও বায়োমেট্রিক করা হয়েছিল যেভাবে ঠিক সেভাবেই হয়তো হতে পারে। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী—

  1. নাগরিকরা স্থানীয় সরকারি অফিস অথবা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
  2. জন্ম তারিখ, ঠিকানার প্রমাণ ও পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।
  3. বায়োমেট্রিক ও ছবি সংগ্রহ করা হবে।
  4. যাচাই প্রক্রিয়ার পর কার্ড পৌঁছে যাবে আবেদনকারীর ঠিকানায়।

Smart Citizenship Card 2025 ভারতীয় প্রশাসনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হতে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোন কার্ড ছিল না। এটি শুধু একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদার প্রতীক। আগামী দিনে এই কার্ড হাতে এলে আর নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা থাকবে না। এই কার্ড থাকলেই হয়ে যাবেন ভারতের নাগরিক এবং ভোট থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক সুবিধা—সব ক্ষেত্রেই এই কার্ড হবে একক সমাধান। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের স্বচ্ছতা ও নাগরিকবান্ধব নীতি অত্যন্ত জরুরি। যদি তা নিশ্চিত করা যায়, তবে স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড সত্যিই ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জীবন সহজ করবে।