পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে জন্ম সনদ (Birth Certificate) সংশোধন নিয়ে বড় আপডেট এসেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সম্প্রতি এক নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে জন্ম সার্টিফিকেটে নাম পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রক্রিয়াকে আরও নিয়ন্ত্রিত ও স্বচ্ছ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বহুদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অভিযোগ উঠছিল—অনেকেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাম পরিবর্তন করাচ্ছেন, এমনকি জন্মের বহু বছর পরেও তথ্য বদলের চেষ্টা করছেন। এই অনিয়ম রুখতেই সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন থেকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে জন্ম সার্টিফিকেট সংশোধনের অনুমতি দেওয়া হবে। যেমন—যদি শিশুর জন্মের সময় নাম উল্লেখ না থাকে এবং পরে তা যোগ করতে হয়, বা সার্টিফিকেটে নামের বানানে টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুল থাকে, তখনই সংশোধনের সুযোগ থাকবে। তবে আদালতের নির্দেশ বা বৈধ প্রমাণপত্র ছাড়া ইচ্ছেমতো নাম পরিবর্তন আর করা যাবে না। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও সন্তানের নাম বা পদবি পরিবর্তনের সুযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে গেলে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের জন্ম প্রমাণপত্র, মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্য কার্ড, স্কুলের ভর্তি সংক্রান্ত নথি, আধার বা ভোটার কার্ড এবং প্রয়োজনে আদালতের ডিক্লারেশন। এসব নথি ছাড়া কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। আবেদন করার জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভা, পঞ্চায়েত বা স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে। অনেক জায়গায় অনলাইনেও আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

এই নতুন নিয়মে প্রভাব পড়বে সেইসব নাগরিকদের উপর, যারা নাম সংশোধনের পরিকল্পনা করছেন বা ভবিষ্যতে তা করতে চান। বিশেষত ছাত্রছাত্রী, পাসপোর্ট আবেদনকারী, প্রবাসী ও বিবাহ-নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও জন্ম সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সার্টিফিকেটের তথ্য সঠিক না থাকলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এই নতুন বিধি দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা বজায় রাখবে। এতে প্রতারণা বা জালিয়াতির সম্ভাবনা অনেক কমবে এবং আধার, প্যান বা পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তথ্যভ্রান্তিও রোধ করা যাবে। নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, জন্মের সময় সঠিকভাবে নাম রেজিস্টার করা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সব নথি সংরক্ষণ করে রাখা।

সবমিলিয়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ জন্ম সনদের তথ্যকে আরও নির্ভুল ও সুরক্ষিত করার দিকেই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন থেকে আর ইচ্ছেমতো পরিবর্তন নয়, বরং ন্যায্য কারণ ও প্রমাণপত্রের ভিত্তিতেই সংশোধন সম্ভব হবে।