ভারতে আধার কার্ড এখন প্রতিটি নাগরিকের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। ব্যাংকিং পরিষেবা থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প, স্কুল-কলেজে ভর্তি কিংবা পেনশন গ্রহণ— প্রায় সব ক্ষেত্রেই আধার কার্ড একটি অপরিহার্য নথি হিসেবে স্বীকৃত। তাই আধার কার্ডের তথ্য যদি ভুল হয় বা পুরোনো থাকে, তবে তা সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি UIDAI (Unique Identification Authority of India) আধার আপডেট সংক্রান্ত নিয়মে নতুন ফি কাঠামো ঘোষণা করেছে। এই নতুন ফি ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।
কী কী পরিবর্তন এসেছে
আগে আধার কার্ড আপডেটের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি ধার্য ছিল, তবে UIDAI নতুন নির্দেশিকায় সেই ফি বাড়িয়েছে। এর ফলে এখন নাগরিকদের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ কিংবা বায়োমেট্রিক তথ্য সংশোধনের জন্য আগের থেকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে একই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হয়েছে, বিশেষত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য।
সাধারণ তথ্য আপডেটের ফি
যারা আধার কার্ডে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, জন্মতারিখ বা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান, তাদের এখন ৭৫ টাকা দিতে হবে। আগে এর জন্য ৫০ টাকা ধার্য ছিল। অর্থাৎ, এই পরিষেবার খরচ প্রায় ৫০% বেড়েছে।
বায়োমেট্রিক আপডেটের নতুন চার্জ
আধার কার্ডে বায়োমেট্রিক তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির স্ক্যানের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করা হয়। আগে বায়োমেট্রিক তথ্য সংশোধন বা আপডেট করার জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হত। এখন সেই ফি বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে, ভবিষ্যতে যদি আঙুলের ছাপ বা আইরিশ স্ক্যান পুনরায় রেজিস্টার করতে হয়, তাহলে নাগরিকদের বাড়তি খরচ বহন করতে হবে।
বাড়িতে বসে আধার আপডেটের সুবিধা
UIDAI এবার বিশেষ একটি পরিষেবা চালু করেছে, যার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই আধার আপডেট করাতে পারবেন। এর জন্য নির্দিষ্ট টিম বাড়িতে গিয়ে আধার আপডেটের কাজ করবে। তবে এই পরিষেবার জন্য খরচ অনেক বেশি— নাগরিকদের ৭০০ টাকা ফি দিতে হবে। যারা বৃদ্ধ, অসুস্থ অথবা চলাফেরায় অক্ষম, তাদের জন্য এই পরিষেবাটি বিশেষভাবে উপকারী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শিশু ও কিশোরদের জন্য ছাড়
সব পরিষেবার খরচ যেখানে বাড়ানো হয়েছে, সেখানে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ছাড়। নবজাতক শিশুদের আধার তৈরি এবং তাদের বায়োমেট্রিক আপডেট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হবে। এছাড়া ৫ থেকে ৭ বছর এবং ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের বায়োমেট্রিক তথ্য আপডেট করার জন্য আগে ৫০ টাকা দিতে হত, এখন সেই ফি সম্পূর্ণ মকুব করা হয়েছে। ফলে এই বয়সসীমার মধ্যে পড়া শিশু ও কিশোররা বিনামূল্যে এই পরিষেবা পাবেন।
কেন এই পরিবর্তন
UIDAI-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা জোরদারের কারণে আধার আপডেট প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এছাড়া সার্ভার, ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং ম্যানপাওয়ার ব্যয়ের চাপও বাড়ছে। সেই কারণেই ফি কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে সাধারণ নাগরিক যাতে অসুবিধায় না পড়েন, তাই শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
নকল আধার থেকে সতর্কবার্তা
UIDAI এও জানিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে নকল আধার কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার চেষ্টা হচ্ছে। তাই আসল আধার যাচাই করা খুবই জরুরি। নাগরিকরা UIDAI-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা mAadhaar অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই তাদের আধারের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
কেন আধার আপডেট জরুরি
ভারতের বেশিরভাগ সরকারি পরিষেবা, স্কিম ও ব্যাংকিং কার্যক্রমে আধার বাধ্যতামূলক। যদি আধারের তথ্য ভুল থাকে, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন— স্কলারশিপের টাকা না পাওয়া, পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়া, অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক না হওয়া। তাই UIDAI বারবার নাগরিকদের আধার আপডেট করার পরামর্শ দিচ্ছে।
নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
ফি বাড়ানো নিয়ে অনেকেরই অসন্তোষ রয়েছে। সাধারণ তথ্য আপডেটের ক্ষেত্রে যেখানে আগে মাত্র ৫০ টাকা খরচ হত, এখন ৭৫ টাকা দিতে হচ্ছে। অনেকের মতে, ডিজিটাল পরিষেবা সহজলভ্য হলেও অতিরিক্ত খরচ নাগরিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। তবে UIDAI-এর দাবি, এই পরিবর্তন আধার পরিষেবাকে আরও নিরাপদ ও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী করে তুলবে।
আধার কার্ড আজ শুধুমাত্র পরিচয়পত্র নয়, এটি ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের সঙ্গে যুক্ত এক অপরিহার্য নথি। UIDAI-এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী আপডেট ফি কিছুটা বাড়লেও এর মাধ্যমে আধার পরিষেবা আরও আধুনিক এবং সুরক্ষিত হবে। তাই নাগরিকদের জন্য পরামর্শ— সময়মতো আধারের তথ্য আপডেট করুন এবং সরকারি পরিষেবাগুলি নির্বিঘ্নে গ্রহণ করুন।

Our team has been engaged in professional content writing for the past 5 years. With extensive experience in creating high-quality, SEO-friendly, and reader-focused articles, we specialize in delivering accurate information on government schemes, education, jobs, technology, and news updates. Our goal is to provide clear, reliable, and engaging content that adds real value to readers while maintaining the highest editorial standards.